Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Title
Benefits of Elephant Apple
Details
  • দেশীয় ফলের মধ্যে কদবেল আমাদের সকলের নিকট অতি পরিচিত। টক স্বাদযুক্ত কদবেল সকল বয়সের লোকের নিকট প্রিয়। কদবেলের খাদ্য উপাদানের পুষ্টি গুণ মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী । সুস্থ সবল দেহ গঠনে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করে কদবেল। প্রায় বেশিরভাগ খাদ্য উপাদানে ভরপুর কদবেল। পাকা কদবেল আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ও সি প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়।

* উদ্ভিদ পরিচিতি ঃ কদবেল গাছ ১২ মিটার থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়। কাঠ শক্ত ও পাতা ঝরা বৃক্ষ। গাছের পাতা কামিনি ফুলের পাতার মতো। গাছের ফল টেনিস বলের মতো গোলআকার। ২-৫ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট সাদা ধূসর বর্ণের শক্ত বেলের মতো খসখসে। খোলসের ভিতর শাঁস থাকে। এই শাঁস খাওয়া হয়। অক্টোবর নভেম্বর মাসে ফলপাকে।

রাসায়নিক উপাদান ঃ ফলের শাঁসে থাকে প্রচুর পরিমানে সাইট্রিক এসিড, মিউসিলেজ ও খনিজ পদার্থ। পাতায় থাকে স্টিগমাস্টেয়ল, সোরালেন, অরিয়েনটিন, ট্যানিন, স্যাপো-নারিন প্রভৃতি। বীজে থাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, অ্যামাইনো এসিড। মূলে থাকে ফেরোনিয়াল্যাকাটোন, বীরগ্যাপটেন, অমথল মারমেসিন এবং মারমিন প্রভূতি উপাদান।


* পুষ্টি উপাদান ঃ কদবেলে প্রচুর পরিমানে আমিষ বা প্রোটিন ও ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম পাওয়া যা আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য খুবই দরকার। পুষ্টিবিধদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী কদবেলের পুষ্টিমান নিম্নরূপঃ জলীয় অংশ ৮৫.৬ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৪৯ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৩ গ্রাম, শর্করা ৮.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৬ মিরিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬০ মিলিগ্রাম, শর্করা ৩১.৮ গ্রাম, নিয়াসিন ১.২ মিলিগ্রাম, ১.২০ মিলিগ্রাম বিবোফ্লোভিন, ০.১৩ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ভিটামিন এ ৫৫ মিলিগ্রাম, আঁশ৫ গ্রাম, ৫০ মিলিগ্রাম ফসফরাস ভিটামিন ই ০.৮০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।


* উপকারিতা ঃ কদবেল ভিটামিন এ,বি,সি সমৃদ্ধ বিধায় ছোট বা সকলের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য খুবই প্রয়োজন। এ ফলটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় আমাদের দেহের না রোগ প্রতিরোধ বিশেষ করে মহিলাদের জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ডায়বেটিস রোগ প্রতিরোধ ভালো কাজ করে কদবেল। কদবেল মৌসুমী জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি, পেটের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। খাবারে রুচি বাড়ায় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। কদবেল লিভার ও হার্টের জন্য বেশ উপকারী। তাছাড়া কদবেল পেটের আলসার নিরাময়ে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কদবেল আরো যে রোগ নিরাময়ে প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে তা হলোঃ

পেটের রোগ নিরাময়ে ঃ কদবেলে ট্যানিন নামক উপাদান থাকে যা ঘন ঘন ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা দূর করে। এছাড়া কাঁচা কদবেল, এলাচ ২/৩ টা গোলমরিচ ও মধু মিশিয়ে খেলে পেটের বদ হজম কমে যায় এবং পেট পরিষ্কার হয়। আমাশয় রোগেও কাজ করে। কদবেলের শাঁস ভিজিয়ে রেখে বা নির্যাস শরবত হিসেবে খেলে কলেরা ও অর্শ্ব রোগে খুবই উপকার পাওয়া যায়।

* রক্ত স্বল্পতা দূর করেঃ পাকা কদবেলে শাঁস নিয়মিত কয়েকদিন খেলে দেহে হিমগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে এবং রক্ত তৈরী হয়। ফলে দেহে রক্ত স্বল্পতা দূর হর। রক্তের দোষ ত্রুটি কমে রক্ত পরিষ্কার হয়। কদবেলের পুষ্টি উপাদান গুলো লো প্রেসার বা নিম্নরক্তচাপ নিরাময়ে সাহায্য করে। রক্ত স্বল্পতার জন্য খুবই বেশি পরিশ্রান্ত লাগা বা হাঁপিয়ে ওঠা বুকের ধড়ফড় হলে তা দূর হয়।

* ক্যান্সার প্রতিরোধে ঃ কদবেলে এমন সব উপাদান রয়েছে যা সবগুলো মিশে মহিলাদের হরমোনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যা কমিয়ে দেয়। যৌন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

* শ্বাসযন্ত্রের রোগ প্রতিরোধে ঃ পাতার রস শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগ নিবারণে সাহায্য করে। গলায় চুলকালে, গলায় ঘা হলে, ঘন ঘন হেঁচকি উঠলে কদবেল খেলে খুবই উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত কদবেল খেলে ফুসফুস পরিষ্কার হয়। হাঁপানী সমস্যা দেখা দিলে কদবেল খেলে উপকার পাওয়া যায়।

* কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ঃ কদবেলে প্রচুর আঁশ আছে। শক্ত পায়খানাকে নরম করে দেহ থেকে বের করে দিয়ে পেট পরিষ্কার করে। তাছাড়া কদবেল ফুল শুকিয়ে পাউডার করে বোতলে ভরে রাখুন সারা বছরই খেতে পারবেন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পুরাতন আমাশয় নিরাময় হয়।

* আলসার নিরাময়ে ঃ কদবেল পেটের যে রোগের প্রতিষেধক পেটে পেপটিক আলসার বা ক্ষত হয়ে গেলে পাকা কদবেলে শাঁস খান আলসার ধীরে ধীরে শুকিয়ে আসবে মুখের রুচি ও বাড়বে। তাছাড়া কঁচি কদবেলের পাতার রস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে পেপটিক আলসার কমে আছে। পায়খানাও পরিষ্কার হবে।

কিডনী সুস্থ্য রাখে ঃ কদবেল ফলটি মূত্রবর্ধক ও উদ্দীপক কিডনীতে ১০ লক্ষ করে প্রায় ২০ লক্ষ নেফ্রন থাকে যা ছাকনির কাজ করে। কদবেলের উপাদান গুলো কিডনী বা বৃক্কের কাজ সুষ্ঠভাবে করার জন্য খুবই সাহায্য করে। ফলে কিডনী পরিষ্কার থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে কিডনি, যকৃত ও লিভারে দোষ ত্রুটি দূর করতে কদবেল প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে।

* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ঃ কদবেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই শক্তিশালী করে তোলে। তাছাড়া আমাদের শরীরের চামড়াকে বুড়িয়ে যেতে দেয় না তারুণ্যকে ধরে রাখে।

* মুখের ব্রুন ও মেছতা নিরাময়ে ঃ মুখে ব্রুন বের হলে খুড়াখুড়ি না করে কচি কদবেলের রস ব্রুনের উপর লাগালে ব্রুন ভালো হয় এবং দাগও দূর হয়। আর যাদের মেছতা আছে তারা কাঁচা কচি কদবেলের রস মেছতার ওপর নিয়মিত ৪/৫ দিন লাগান মেছতার দাগ দূর হবে। তবে মনে রাখবেন প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি খাবেন।

* হাঁড় মজবুত করে ঃ কদবেলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। যা দেহের হাঁড় ও দাঁতের গঠন পরিপক্ক করে দেহকে সুস্থ্য রাখে। হাঁড়ের জোড়ার মাঝে থাকা মিউকাস পরিপুষ্ট করে। ফলে ওঠাবসার সমস্যা নিরাময় করে।

* সতর্কতা ঃ কিডনি রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ মতে কদবেল খাবেন। প্রতিদিন মজা পেয়ে বেশী খাবেন না। যেকোন ফল খাওয়ার পর পরই চা খাবেন না। কারণ চায়ের ক্যাপিন খাদ্যের আয়রণ শোষণ করতে বাধা দেয়। বেশি করে ফল খান সুস্থ্য থাকুন।

Images
Attachments
Publish Date
31/10/2022
Archieve Date
31/01/2023